কুলসুম আক্তার সুমী
ফিরবি বলেছিলি কোন এক বকুলগন্ধী নিশিথে।
তোর গান তোর সুরে নয়, বেজেছে তঞ্চঙ্গা সুরে;
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে আটকে গেছে জীবন……,
কেউ আসতে বলেছে কেউ যেতে,
সময় হয়নি তোর, আর ফেরার।
তারপর কত কত আলোমুখী পতঙ্গ
মাথা কুটে মরেছে মনের উঠোন জুড়ে;
সবুজ পাতার ছাউনি দেওয়া দক্ষিণমুখী ঘর,
কত তার সাজসজ্জা, কত পরিপাটি; তবু…
চন্দ্র উৎসবে মাতা হয়নি আর আমার!
ঘাসফুল ছিঁড়ে মধু খাওয়া,
ঝিঙে ফুলে ফিঙের পিছন পিছন দৌড়ানো,
ঝিঁঝিঁর ডেরায় সাঁড়াশি আক্রমন..তুই ভুলতে পারিস।
আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় অহর্নিশ;
অশ্বারোহী হয় মন—থামাতে পারিনা, পারিনা!
মনের বাড়ি দুই দুয়ারি ঘর, দু’টোই শক্ত বোধের তালা!
মনঘুড়িটা শক্ত সুতোয় বাধা
ফিরে এলেই উড়বে নীলাকাশে, মেঘের ফাঁকে ফাঁকে।
কিন্তু তোর যে আর হলো না সময়;
একলা আমি বেরিয়ে পড়ি পথে, স্বপ্নলোকের রথে!
আমার একটা নিজের জগত এখন,
যখন তখন যার তার সাথে আড়ি।
হরহামেশা প্রেমে পড়ি মিটিয়ে মনের খায়েশ..
আমার রাজ্যে আমিই কেবল রাজা,
ওটা শুধুই আমার; আমার মনের বাড়ি।
তোর সাথে শুধু জোৎস্না দেখার কথা ছিলো,
দ্বিচক্রযানে হারিয়ে যাওয়া একটা সন্ধ্যা।
হেমন্তের সকালে মিঠেকড়া রোদে পুলি পিঠার স্বাদ;
এক পেয়ালা ঝলমলে রোদেলা দুপুর!
একটা হিরন্ময় বিকেল; কিন্তু কোথায় এ অবেলায়!?
ঘুম কাতুরে বলে বরাবরই আমার ব্যাপক সুনাম!
আমার যখন যেভাবে ‘যেখানে কাত, সেখানেই রাত’।
তবুও তো কোন কোন রাতে চিনচিনে ব্যথা হয় বুকে,
অক্সিজেনের অভাববোধও হয় কিঞ্চিত,
খোলা প্রান্তর চায় মন, চায় না শরীর; একাকীত্ব করে তারে গ্রাস!
কষ্ট কিসে? ভোগ-ত্যাগ, দখল-বিসর্জন?
কষ্ট শুধু প্রশ্নে—কি এমন করেছো? কতটুকু দিয়েছো প্রেম?
প্রতিদান কেন চাও এতো!?
আমি তো চাইনি তেমন কিছু আর—
এক বাটি জোৎস্নার ফুল, একমুঠো কাঁঠাল চাঁপার ঘ্রাণ!
কোনদিন দুর্লভে রাখিনি চোখ
যেখানে বিন্দুমাত্র ছিলো সংশয় প্রত্যাখ্যানের।
‘তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে নয়, যে তোমাকে ভালোবাসে’
তার সাথেই করেছি জীবন বিনিময়।
উদ্বায়ী সময়ের অনেকগুলো বছরও কেটেছে নির্দ্ধিধায়।
তবু, তুই ই ছিলি আমার অন্যরকম প্রেম!
শৈশবের এক্কা-দোক্কা খেলার সাথী,
কৈশোরের প্রাণ বন্ধক রাখা বন্ধু,
যৌবনের ইচ্ছেডানায় ভেসে আসা প্রেমিক;
ভগ্নাংশে ভাঙ্গা প্রতিবিম্ব—সমগ্রে অভিভাবক।
তুই ই ছিলি আমার সেই অন্যরকম প্রেম;
একমাত্র পুরুষ, এক জীবনে, একমাত্র বিকেল
যার অপেক্ষায় কেটেছে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে।
বিরহে কাতর হয়েছে হিয়া, অপেক্ষায় যন্ত্রণা…
আর্দ্র হয়েছে চোখের কোণ তখনো-এখনো!